শুক্রবার দুপুর প্রায় আড়াইটের সময় আচমকাই বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের আউট পোস্ট থেকে বেরিয়ে আসেন কমিশনের আউটপোস্টের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে থাকা কালিম্পঙের বাসিন্দা চোডুপ লেপচা। কাঁধে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল। । কাজ করতেন কলকাতা পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীর পঞ্চম ব্যাটালিয়নে। সপ্তাহখানেক আগে আরও অনেকের সঙ্গে তাঁকেও বেকবাগানের কাছে বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের আউটপোস্টের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে মোতায়েন করা হয়েছিল।করোয়া থানা এলাকার লোয়ার রেঞ্জ রোড দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এগোতে থাকেন তিনি। কাঁধের রাইফেল নেমে হাতে নিয়ে চালাতে থাকেন এলোপাথাড়ি গুলি। গুলি ছুড়তে ছুড়তে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকেন চোডুপ। সেই সময় লোয়ার রেঞ্জ রোড ধরে এপিসি রোডের দিকে আসছিল একটি অ্যাপ নির্ভর বাইক। চোডুপের গুলি গিয়ে লাগে বাইকের দুই আরোহীর গায়ে। পিছনের আসনে বসেছিলেন এক মহিলা। তাঁর মাথা ফুঁড়ে গুলি বেরিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর।
বাইক চালকের গায়েও গুলি লাগে। তার পর নিজের রাইফেল থেকে গুলি চালিয়ে দেন নিজের গলার কাছে। ঘটনাস্থলেই চোডুপেরও মৃত্যু হয়। মৃত ভদ্রমহিলা হাওড়ার দাশনগরের ১৩৩ নম্বর ফকির মিস্ত্রি বাগানের বাসিন্দা রিমা সিংহ (২৮) । মাসখানেক বাদে বিয়ে স্থির হয়েছিল -এর। শুক্রবার তাঁর সঙ্গে দেখা করতে রিমার বাড়িতে পৌঁছেছেন হবু স্বামী প্রবীর রায়। রিমা ফোনে তার হবু স্বামীকে বাড়িতে অপেক্ষা করতে বলে । কিছু ক্ষণের মধ্যেই তাঁদের দেখা হওয়ার কথাও ছিল। কিন্তু তার আগেই পুলিশ দাশনগরের বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দেয় গুলিতে মৃত্যু হয়েছে রিমার। এই খবর পৌঁছনো মাত্র শোকের ছায়া নেমে এসেছে রিমার বাড়িতে । রিমার মায়ের কথায়, ‘‘আমার মেয়েটা যে এ ভাবে চলে যাবে তা ভাবতেও পারিনি। ও বেলা ১২টা নাগাদ হাসতে হাসতে বেরোল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কখন ফিরবি?’ ও বলল, ‘সন্ধ্যায় ফিরব।’ এর কিছুটা পর আমাদের বাড়িওয়ালা আমাকে ডেকে বললেন, ‘রিমার মৃত্যু হয়েছে গুলিতে।’ ওদের বিয়ে স্থির হয়েছিল। আমাদের হবু জামাই প্রবীরের বাবা মারা গিয়েছে। আজ বিয়ের দিন স্থির করার কথা ছিল। সেই জন্য প্রবীর এসেছিল।"
এদিকে কলিন স্ট্রিটের বাসিন্দা মহম্মদ বশির আলম লোয়ার রেঞ্জ রোড ধরে কাজে যাচ্ছিলেন নিউটাউন। ১৩ নম্বর লোয়ার রেঞ্জের কাছে পৌঁছতেই আচমকাই কান ফাটানো গুলির আওয়াজ পান। একটি গুলি এসে লাগে তাঁর পিঠে। দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে বাইক নিয়ে বশির ছোটেন। পার্ক সার্কাস মোড়ে পুলিশ দেখতে পেয়ে দাঁড় করান বাইক। পিঠ থেকে রক্ত ঝরছে। অবস্থা দেখে মুহূর্তে ভিড় জমে যায়। পুলিশ তড়িঘড়ি বশিরকে নিয়ে যায় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারে পাঠানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, বশির বিপন্মুক্ত । এদিন এলোপাথাড়ি গুলি চালনার ঘটনায় আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের বাসিন্দা মহম্মদ সরফরাজ ও আহত হন ।
তবে তাঁর আঘাত গুরুতর নয় বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে । সেখানেই আপাতত তাঁদের চিকিৎসা হবে । ঘটনাস্থল থেকে মৃত মহিলা রিমা ও পুলিশকর্মী চোডুপকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার প্রবীন ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘চোডুপ লেপচা সম্ভবত মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। সেই কারণেই তিনি এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে নিজেও আত্মঘাতী হলেন কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়।’’
Comments