করোনাকালের লকডাউনেই কলকাতায় রমরমিয়ে পর্নছবি শ্যুটিংয়ের ব্যবসা । বৃহস্পতিবার নিউটাউন থেকে এক নায়িকা এবং তাঁর সঙ্গীকে পুলিশ গ্রেফতার হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ-প্রশাসন।
করোনা অতিমারি সারা পৃথিবীর জীবনকে থমকে দিয়েছে। তার পাশাপাশিই থমকে গিয়েছিল শহর কলকাতা এবং তার উপকণ্ঠে বিভিন্ন উপনগরীর দৈনন্দিনতা। কিন্তু সেই ছায়ায় রমরম করে বেড়েছে বৃহত্তর কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় পর্নোগ্রাফি ছবির শ্যুটিংয়ের ব্যবসা। বৃহস্পতিবার নিউটাউন থেকে এক নায়িকা এবং তাঁর সঙ্গীকে পুলিশ গ্রেফতার হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ-প্রশাসন।
অর্থই পর্নোগ্রাফিক ছবিতে অভিনেতা-অভিনেত্রী তথা কলাকুশলীদের আকর্ষণের প্রধান কারণ, এমনই দাবি পর্ন অভিনেত্রী সোনাক্ষীর (নাম পরিবর্তিত)। তাঁর কথায়, ‘‘পর্নে কাজ করার ইচ্ছা প্রথম হয়েছিল লকডাউনের সময়। যখন হাতে অন্য কোনও কাজ ছিল না। টাকাও ছিল না৷ প্রথম দিকে বিষয়টায় ততটা আগ্রহী ছিলাম না। তার পরে দেখলাম অল্প পরিশ্রমেই প্রচুর টাকা পাওয়া যায়।’’ কত পারিশ্রমিক পর্নছবিতে অভিনয় করতে? সোনাক্ষীর জবাব, ‘‘এখানে অভিনেত্রীদের কদর অভিনেতাদের থেকে অনেক বেশি। সাধারণত নতুনরা প্রতিদিনের শ্যুটিংয়ের জন্য ১০ হাজার টাকা পায়। একটু অভিজ্ঞতা হয়ে গেলে একদিনের শ্যুটে ৪০ হাজার টাকা পাওয়াও কোনও ব্যাপার নয়।’’ শুধু কি টাকার জন্যই সকলে এই কাজে আসেন? পর্নদুনিয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া এক জনের বক্তব্য, অনেক ক্ষেত্রে শ্যুটের শুরুতে বলা হয়, শিল্পের জন্য সীমিত নগ্নতা থাকবে। তার পর শ্যুট করতে গিয়ে দেখা যায়, সেগুলি পর্নোগ্রাফি ছাড়া কিছু নয়। তখন অনেকে ফিরে যান। অনেক সময় পরিচালক-প্রযোজকরা মোটা টাকার বিনিময় শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাবও দেন। তখনও অনেকে পর্নছবির জগৎ ছাড়তে বাধ্য হন।
অভিনেত্রী শিল্পা শেট্টির স্বামী রাজ কুন্দ্রার গ্রেফতারি নড়িয়ে দিয়েছে পর্দার আড়ালে রমরমিয়ে চলা ‘শিল্পের জগৎ’-কে। যার পোশাকি নাম ‘পর্নোগ্রাফি’। বছর ছয়েক আগেও জেমস বন্ড সিরিজের ‘স্পেক্টর’ ছবির চুম্বনদৃশ্য কাটা পড়েছিল জাতীয় সেন্সর বোর্ডের কাঁচিতে। অনেকের মতে, সেই দেশই এখন পর্নোগ্রাফির ‘পীঠস্থানে’ পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন পর্ন সাইটগুলিতে রমরমিয়ে চলছে ভারতীয় পর্নোগ্রাফি। ওই ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের একাংশের বক্তব্য, পর্নোগ্রাফির জন্ম বা বাড়বাড়ন্ত হঠাৎ নয়। দর্শক এবং ব্যবসায়ীদের যত্নে দ্রুত চারাগাছ থেকে তা মহীরুহে পরিণত হয়েছে। জন্মলগ্ন থেকে পর্নছবিতে কাজ করা অভিনেত্রী অবনিতার কথায়, “কলকাতায় পর্নছবি তৈরি হচ্ছে প্রায় তিন বছর ধরে। শুরুতে বোল্ড মডেলিংয়ের ভিডিয়ো হত। যা ইউটিউবে বেশ জনপ্রিয় ছিল। ধীরে ধীরে শরীরে পোশাকের পরিমাণ কমতে শুরু করে। এখন যা ইন্ডাস্ট্রির রূপ নিয়েছে!’’
পর্ন-কাণ্ডে গ্রেফতার রাজকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, তাঁর পর্নছবি মূলত দেখানো হত অ্যাপে। কলকাতার পর্ন-উডে এমন বেশ কিছু অ্যাপ ব্যাঙের ছাতার মতো ছড়িয়ে রয়েছে, যেগুলি পর্নপ্রেমীদের নিয়মিত বিনোদন জোগায়। গ্রাহকদের জন্য অ্যাপগুলিতে রয়েছে বিভিন্ন রকমের ‘সাবস্ক্রিপশন প্যাকেজ’। তথ্যাভিজ্ৎদের মতে, কলকাতার বেশ কিছু পর্ন অ্যাপের প্যাকেজমূল্য টেক্কা দিতে পারে দেশের প্রথম সারির বিনোদনের অ্যাপকেও। তবে হিসেবি গ্রাহকদের কথাও ভাবেন পর্ন-নির্মাতারা। তাঁদের জন্য অ্যাপে মুক্তির কিছু দিন পরেই ভিডিয়োগুলি আপলোড করে দেওয়া হয় বিশ্বের জনপ্রিয় পর্ন সাইটগুলিতে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক পর্ন অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘কলকাতায় তৈরি হলেও আমরা চেষ্টা করি একটা ভিডিয়ো যত বেশিসংখ্যক ভাষায় সম্ভব মুক্তি দেওয়ার। তবে এখানে ভাষার গুরুত্ব অনেকটা কম।’’ এক পর্ননির্মাতার বক্তব্য, পর্ন কলকাতায় তৈরি করলেও অ্যাপ এবং সাইট থেকে বিদেশি মুদ্রা উপার্জন করা যায়।
প্রশানিক সূত্রের খবর, কলকাতায় বেশির ভাগ ছবিরই শ্যুট হয় প্রায় সারাদিন ধরে। কখনও টানা দু’দিন। যতক্ষণ ফ্রেমের বাইরে, ততটুকুই অভিনেতা-অভিনেত্রীদের বিশ্রামের সুযোগ। শরীরের তোয়াক্কা না করে সারা দিন সঙ্গমের জন্য তৈরি থাকতে হয়। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও অর্থ উপার্জনের সেদিকে নজর দেওয়া যায় না।
প্রশানের একাংশের বক্তব, করোনাকালেই কলকাতা এবং তার উপকণ্ঠে বিভিন্ন এলাকায় বাড়বাড়ন্ত হয়েছে পর্ন ব্যবসার। এক পর্ন অভিনেতার কথায়, “গাড়ি না চললেও মোটরবাইকে করে নিয়ে আসা হত কলাকুশলীদের। শ্যুট করা হত নিজেদের বাড়িতে।” এখন কড়াক়ড়ি খানিকচা শিথিল হওয়ার পর বড় বাজেটের কাজের শ্যুট হয় হোটেল বা রিসর্টে। তবে গত ক’দিন ধরে পর্নছবি প্রতিরোধে পুলিশের তৎপরতা চিন্তায় ফেলেছে পর্ননির্মাতাদের। শুধু নির্মাতারাই নন, কিছু অভিনেত্রীও খোলামেলা ছবি প্রকাশের জন্য নিজস্ব অ্যাপ বানিয়েছিলেন। এখন ফাঁপরে পড়েছেন তাঁরাও। তবে এক প্রাক্তন পর্নছবি পরিচালকের দাবি, ‘‘খোদ কলকাতাতেই পর্ন ইন্ডাস্ট্রির যা রমরমা, তাতে ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে!’’
Check out for more news on https://www.facebook.com/AMPTvNews
Subscribe for more stories https://www.youtube.com/c/AMPMusicChannel
Comments